জ্বালানি তেলের দাম ৫ টাকা কমানো হয়েছে প্রতি লিটারে

- আপডেট সময় : ০৬:৪৫:১১ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৯ অগাস্ট ২০২২ ৯১ বার পড়া হয়েছে

জ্বালানি তেলের দাম এক ধাক্কায় ৫০ শতাংশের মতো বাড়ানোর ২৩ দিন পর কিছুটা দাম কমিয়েছে সরকার।
অকটেন, পেট্রোল, ডিজেল ও কেরোসিন এই চার ধরনের জ্বালানির দাম লিটার প্রতি ৫ টাকা কমিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, নতুন মূল্য সোমবার মধ্যরাত থেকেই কার্যকর হবে।
মহামারীর পর ইউক্রেইন-রাশিয়া যুদ্ধের প্রভাবে জ্বালানি সঙ্কটকে কারণ দেখিয়ে গত ৬ অগাস্ট সব ধরনের জ্বালানি তেলের দাম বাড়ায় সরকার।
তাতে ডিজেল ও কেরোসিনের দাম ৪২.৫ শতাংশ বেড়ে হয় প্রতি লিটার ১১৪ টাকা।
পেট্রোলের দাম ৫১.১৬ শতাংশ বেড়ে প্রতি লিটার ১৩০ টাকা এবং প্রতি লিটার অকটেনের দাম ৫১.৬৮ শতাংশ বেড়ে হয় ১৩৫ টাকা।
এখন ৫ টাকা কমানোয় ডিজেল ও কেরোসিনের দাম হবে প্রতি লিটার ১০৯ টাকা, পেট্রোলের দাম হবে ১২৫ টাকা এবং অকটেনের দাম হবে ১৩০ টাকা।
জ্বালানি তেলের দাম আরও কমানোর ইঙ্গিত
বৈশ্বিক বাজারে জ্বালানি তেলের দাম কমলে আবারও সমন্বয় করা হবে। বর্তমানে কিছুটা কর কমানোয় জ্বালানি তেলের মূল্যে সমন্বয় করা হয়েছে।
মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে প্রতিমন্ত্রীকে উদ্ধৃত করে ভবিষ্যতে জ্বালানি তেলের দাম আরও কমানোর ইঙ্গিত দেওয়া হয়।
যুদ্ধের প্রভাবে বিশ্ব বাজারে জ্বালানির দামের অস্থিরতার মধ্যে গেল জুলাই মাসের শেষের দিক থেকেই জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির গুঞ্জন শোনা যাচ্ছিল মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের মুখে।
তবে সরকার যখন জ্বালানি তেলের দাম বাড়িয়েছিল, তখন বিশ্ব বাজারে দাম কমতে থাকায় প্রশ্ন তৈরি হয়।
এদিকে রোববার ডিজেল আমদানিতে ৫ শতাংশ শুল্ক কমানোর পাশাপাশি সব ধরনের অগ্রিম কর তুলে নেওয়ার প্রজ্ঞাপন জারি করে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড-এনবিআর।
এনবিআর কর্মকর্তারা জানান, ডিজেলে সব মিলে প্রায় ১১ দশমিক ২৫ শতাংশ পয়েন্ট কমিয়ে আমদানি শুল্ক ২২ দশমিক ৭৫ শতাংশে নামিয়ে আনা হয়েছে।
এর আগে ডিজেল আমদানিতে ১০ শতাংশ আমদানি শুল্ক, অগ্রিম কর ও অন্যান্য করসহ মোট ৩৪ শতাংশ শুল্ক পরিশোধ করতে হত।
এরপর সোমবারই বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) চেয়ারম্যান এ বি এম আজাদ সাংবাদিকদের বলেন, শুল্ক ও কর ছাড়ের প্রভাব কতটা পড়ছে, তা দুই থেকে তিন দিনের মধ্যে তারা জানতে পারবেন।
ডিজেল বিক্রিতে বিপিসির লোকসানের চিত্র
জ্বালানি তেলের দাম নতুন করে সমন্বয়ের পর ডিজেল বিক্রিতে বিপিসির লোকসানের চিত্র সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে তুলে ধরা হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, প্লাটস- এর হিসাবে, গত ২৬ অগাস্ট প্রতি ব্যারেল পরিশোধিত ডিজেলের মূল্য ছিল ১৪৭ দশমিক ৬২ মার্কিন ডলার।
সে অনুযায়ী প্রতি লিটার ডিজেলের মূল্য পড়ে ১২৮ দশমিক ৬১ টাকা। অর্থাৎ ১০৯ টাকা ধরে ডিজেল বিক্রয় করলে প্রতি লিটারে বিপিসির লোকসান হবে ১৯ দশমিক ৬১ টাকা।
বিপিসি গত ছয় মাসে (ফেব্রুয়ারি ২২ থেকে জুলাই ২০২২ পর্যন্ত) জ্বালানি তেল বিক্রি করে ৮ হাজার ১৪ কোটি টাকা লোকসান দিয়েছে বলেও বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে।
প্রায় শতভাগ জ্বালানি তেল আমদানি করা বাংলাদেশের পরিবহন খাতের ৯০ শতাংশ এবং বিদ্যুৎ উৎপাদনের ৩৪ শতাংশ তেলনির্ভর। দেশে ব্যবহৃত তেলের ৭০ শতাংশের বেশি ডিজেল।
মূল্য সমন্বয়ের পরও ভর্তুকি চালিয়ে যেতে হবে বলে সোমবারই সাংবাদিকদের বলেন প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ।
তিনি বলেন, তেলের বাজার আবার বেড়ে গেছে। (প্রতি ব্যারেল) ১৫০ ডলারের ঊর্ধ্বে চলে গেছে, যেটা ১৩০ ছিল কিছুদিন আগে।
এ অবস্থায় আমরা কতটুকু মূল্য সমন্বয় করতে পারব! কারণ এখানে ভর্তুকির একটা বড় অংশ যোগ হবে আবার।
যখন ডিজেল ১১৪ ডলার ছিল তখন ৮ টাকার ওপরে লোকসান হয়েছে। এখন হয়ত সেই জায়গাটা আরও বাড়বে।
তবে আন্তর্জাতিক বাজারে আবার দাম বেড়ে যাওয়ায় নিজের আশঙ্কার কথা তুলে ধরেছেন প্রতিমন্ত্রী।
তিনি বলেন, তেলের দাম আবারও বেড়ে গেছে। এটা আমরা আশাই করি নাই।
আমরা মনে করেছিলাম, ট্রেন্ডটা নিচের দিকে যাবে। এখন এটাও ভয় পাচ্ছি, আরও বেড়ে যায় নাকি।
নাম মাত্র কমানো হয়েছে জ্বালানী তেলের দাম
গেল ৬ অগাস্ট জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর আগে ডিজেল ও কেরোসিনের দাম বাড়ানো হয়েছিল ২০২১ সালের ৩ নভেম্বর।
তখন প্রতি লিটারে দাম ৬৫ টাকা থেকে ২৩ শতাংশ বাড়িয়ে করা হয়েছিল ৮০ টাকা।
নয় মাসের মাথায় তা এক লাফে ৩৪ টাকা বাড়িয়ে ১১৪ টাকায় নেওয়া হয়। সেখানে কমানো হল মাত্র ৫ টাকা।
অকটেন আর পেট্রোলের দাম সর্বশেষ বাড়ানো হয়েছিল ২০১৬ সালের ২৪ এপ্রিল। সেই হিসাবে ছয় বছর ২ মাস পর বাড়ানো হয় এই দুই তেলের দাম।
৮৬ টাকার পেট্রোল ৪৪ টাকা বেড়ে ১৩০ টাকা এবং ৮৯ টাকার অকটেন ৪৬ টাকা বেড়ে হয় ১৩৫ টাকা।
একবারে ৫০ শতাংশ জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির ঘটনা আর কখনও ঘটেনি।
৭ বছর মুনাফায় থাকা বিপিসি ইউক্রেইন যুদ্ধের জেরে লোকসানে
ইউক্রেইন যুদ্ধের জেরে অস্থির বিশ্ব বাজারে অপরিশোধিত তেলের দাম প্রতি ব্যারেল ৭০ ডলার থেকে বেড়ে ১৪৭ ডলার হয়েছিল।
সাত অর্থবছর মুনাফায় থাকা বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি) ইউক্রেইন যুদ্ধে বড় ধাক্কা খেয়েছে; দীর্ঘদিন পর আবার লোকসানে পড়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাটি।
অগাস্টের শুরুতে দাম বাড়ানোর আগে প্রতিদিন ১০০ কোটি টাকার ওপর সংস্থাটি লোকসান দিচ্ছিল বলে দাবি করা হচ্ছে।